ঢাকা: বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে ‘প্রথম রাষ্ট্রপতি’ বলে সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের (এমপি) তোপের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত এমপি সুবিদ আলী ভূঁইয়া।
বুধবার (১৭ আগস্ট) সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির বৈঠকে এ কথা বলার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
এমনকি সুবিধ আলীর আওয়ামী লীগে থাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন অনেকে। তারা বলেন, সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ নিতেই আওয়ামী লীগের যোগ দিয়েছেন তিনি।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র অগ্রদৃষ্টিকে বিয়ষটি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র বলছে, বুধবার সংসদ ভবনে সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্মরনিকায় ‘জিয়া প্রথম রাষ্ট্রপতি’ উল্লেখ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছিলো। এ সময় হঠাৎ করে সুভিধ আলীও বলেন, ‘জিয়াই প্রথম রাষ্ট্রপতি’। এনিয়ে কমিটির অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়।
বিষয়টি স্বীকার করে কমিটির সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক অগ্রদৃষ্টিকে জানান, ‘‘আজ বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) নিয়ে আলোচনা ছিলো। আমি ইউজিসির চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে প্রকাশিত স্মরণিকায় জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের ‘প্রথম রাষ্ট্রপতি’ উল্লেখ করা হয়েছে।’’
‘শিক্ষামন্ত্রীর মতে- বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তাদের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। কিন্তু ইউজিসি তো এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইতে পারে। আলোচনার এ পর্যায়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান কিছু বলার আগেই সুবিদ আলী ভূঁইয়া বলে ওঠেন, জিয়াই বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। এটা তিনি তার বইতেও লিখেছেন।’
মানিক বলেন, ‘তখন আমি বলেছি বিএনপি যে স্যাটেলড ইস্যু নিয়ে বিতর্ক করতে চায়, আপনিও (সুবিদ) যদি সেই একই বিষয় নিয়ে কথা তোলেন তাহলে কী দাঁড়ালো?’
তবে নানা সমালোচনা ও তোপের মুখেও নিজের অবস্থানে অনঢ় ছিলেন কুমিল্লার দাউদকান্দি ((কুমিল্লা-১) আসনের সংসদ সদস্য সুবিধ আলী ভূঁইয়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘সুবিদ আলী ওই কথা বলার পর কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে তার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। পরে কমিটির সভাপতি শওকত আলীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
কমিটির অন্য সদস্যরা বলতে থাকেন, ‘তিনি (সুবিদ আলী) আওয়ামী লীগের আদর্শ ধারণ করেন না। কেবল এমপি হওয়ার সুযোগ নিতে তিনি এই দলে আছেন।’
তাদের একজন তো বলেই বসেন, ‘আপনি তো জিয়ারই সৈনিক। আপনার আসনে বিএনপির বড় নেতা মোশাররফ হোসেন, তাই আপনি বিএনপির মনোনয়ন পান না। এমপি হওয়ার জন্য আপনি এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছেন।’
এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি শওকত আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুবিদ আলী ভূঁইয়ার সঙ্গে অন্য সদস্যদের যে বিতর্ক হয়েছে, সেটা আলোচ্য সূচিতে ছিলো না। তাই বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এ আলোচনা বাদ দেওয়া হবে।
বৈঠকে নুরুল মজিদ হুমায়ুন, আবদুর রউফ ও নাভানা আক্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দশম জাতীয় সংসদে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুবিদ আলী ভূঁইয়া বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) ছিলেন।
নবম জাতীয় সংসদেও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে জিয়াউর রহমানের অধীনেই যুদ্ধে অংশ নেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।